
কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের চরনেওয়াজী গ্রামে জন্ম নেওয়া আসিফ। বয়স প্রায় ২৬। তিন ভাই ও স্ত্রী ২টা মেয়ে শশুর শাশুড়ি র সংসারে সে একমাত্র উপার্জনক্ষম। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আসিফ কথা বলতে পারে না। কিন্তু জীবন সংগ্রামে সে কখনো হার মানেনি।
আসিফ দুই ভাই মানসিকভাবে অসুস্থ। ২টা মেয়ে স্ত্রীর শ্বশুর-শাশুড়িদের দেখাশোনা করা এবং পুরো সংসার চালানোর দায়িত্ব একা তার কাঁধে। নিজের হাতে গড়ে নিয়েছে একটি স্বপ্ন। সে পেশায় একজন নাপিত। তবে দোকান নেই তার। নিজের কষ্টের জমানো টাকা আর কিস্তিতে কেনা একটি মোটরসাইকেল নিয়ে প্রতিদিন ঘুরে বেড়ায় গ্রামে গ্রামে। খোলা মাঠ, বাড়ির উঠান কিংবা রাস্তার ধারে বসে মানুষের চুল কেটে দেয়।
আসিফ প্রতি চুল কাটায় মাত্র ১০০ টাকা নেন। দিনে কখনো ৫-৭ জনের চুল কাটতে পারে, কখনো তারও কম। এই সামান্য আয়ে চলে তার পুরো সংসার। দুই মেয়ে ও স্ত্রী শশুর শাশুড়ি খাবার, ওষুধ, আর নিজের প্রয়োজন—সবকিছুই এই টাকার ওপর নির্ভরশীল।
কিস্তিতে কেনা বাইকই এখন জীবনযুদ্ধের সঙ্গী;

সম্প্রতি নিজের প্রয়োজন মেটাতে কিস্তিতে কিনেছে একটি মোটরসাইকেল। কারণ, এই বাইক ছাড়া সে গ্রামে গ্রামে যেতে পারবে না। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাইক চালিয়ে ছুটে চলে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে।
স্থানীয় হাফেজ গোলাম মোস্তফা বলেন, “আসিফ কথা বলতে পারে না, কিন্তু তার কাজের মধ্যে আলাদা এক মায়া আছে। এই ছেলেটা বড়ই দায়িত্বশীল। দুই মেয়ে শ্বাশুড়ী নানি শাশ্বড়ী শালিকা দেখভাল এমনভাবে করে, যা অনেক সুস্থ মানুষের পক্ষেও কঠিন।”
রুহুল্লা খমেনী বলেন,”আমরা সবাই চেষ্টা করি ওকে কাজ দিতে। ও কাউকে কিছু বলে না, কিন্তু চোখে সব বোঝা যায়।”

আসিফ সবচেয়ে বড় স্বপ্ন, একদিন সে নিজের একটি সেলুন খুলবে। তখন আর তাকে রোদে-জলে ঘুরে বেড়াতে হবে না। আরও বড় স্বপ্ন, দুই ভাইকে একদিন ভালো চিকিৎসা করাবে। পরিবার টা সুন্দর ভাবে পরিচালনা করবে।
আসিফ কারও কাছে সাহায্যের জন্য মুখ খোলে না। তবে সমাজের সহানুভূতিশীল মানুষেরা এগিয়ে এলে হয়তো তার জীবন আরও সহজ হতে পারে।
সাব্বির/একে