

রাজিবপুর: ভৌগোলিক গুরুত্ব ও অবস্থান;
রাজিবপুর উপজেলা বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা, যা স্থানীয়ভাবে রাজিবপুর নামে পরিচিত। ‘৭১ এর নারী বীরপ্রতীক তারামন বিবির জন্মস্থান । ১৯৭১ এ অঞ্চলে পাকবাহিনীর কোন স্থায়ী ক্যাম্প ছিল না তবে ভারতের আসাম মেঘালয় থেকে এই রাজিবপুরের উপরদিয়েই জামালপুরস্থ দেওয়ানগঞ্জ ক্যাম্পে আক্রমন চালায়, অঞ্চলটির ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বেশকয়েকটি কারণে, এটি জামালপুর সীমান্তে এবং কুড়িগ্রাম জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে জিঞ্জিরাম নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন, মেঘালয় থেকে উৎপন্ন জিঞ্জিরাম নদী রাজিবপুরের পূর্বদিকদিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিনটি জেলা তথা কুড়িগ্রাম-জামালপুর-গাইবান্ধা হয়ে পুরানা ব্রহ্মপুত্রের মোহনায় পতিত হয়েছে, ভারতের আসাম অংশের জিঞ্জিরাম থেকে উৎপন্ন সোনাভরি নদিটি রাজিবপুরের উত্তর থেকে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিমের মোহনায় পতিতি হয়েছে। রাজিবপুরে ৩০টি ছোট-বড় চর রয়েছে, যা এখানকার মৌসুমভিত্তিক কৃষিজমি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বর্ধিত করে।
এছাড়াও, রাজিবপুর উপজেলার উত্তরে রৌমারী তূরা স্থলবন্দর, পূর্বে বালিয়ামারী-কালাইরচর সীমান্ত হাট, দক্ষিণ-পূর্বে কামালপুর স্থলবন্দর, দক্ষিণে বাহাদুরাবাদ আন্তর্জাতিক নৌঃবন্দর ও ব্রহ্মপূত্র পশ্চিমে আন্তঃদেশীয় চিলমারী নৌঃবন্দর,
উত্তরপূর্বে ভারতের আসাম রাজ্য, পূর্বে মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে জামালপুর দক্ষিণ-পশ্চিমে গাইবান্ধা, এবং পশ্চিমে চিলমারী উপজেলা ও পশ্চিম-উত্তরে জলথানা অবস্থিত। সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কৃষি উৎপাদন একটি বড় অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি।

নদীভাঙন: প্রতিবন্ধকতা এবং সম্ভাবনা;
রাজিবপুরের নদীভাঙন একটি বড় সমস্যা। প্রতিটি ইউনিয়ন—কোদালকাটি, মোহনগঞ্জ এবং রাজিবপুর সদর—নদীভাঙনের ক্ষতিগ্রস্ত। প্রতি বছর একেকটি পরিবার তাদের বসতভিটা, ফসলিভূমি ও গবাদিপশুপাখি হারিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করতে বাধ্য হয়। এমন চলছে শতকেরপর শতক তবুও এখানকার মানুষ আশাহত না হয়ে দৃঢ় প্রত্যয়ে নতুন বসতির জন্য সচেস্ট হয়, নদীভাঙনের ও অনিয়ন্ত্রিত বন্যার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
নদীভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, যেমন জিও ব্যাগ প্রযুক্তির বাঁধ নির্মাণ। রেইনট্রিকড়ই, সজনে বা সহজে শিকড় বিস্তারকারি বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে
নদীভাঙন মোকাবেলা এবং সুনির্দিষ্টস্থানে পরিকল্পিত নদীখননে গভীরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিত বন্যার ক্ষতি মোকাবেলা করা সম্ভ
এখানে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে ধান, কাউন, আলু, সরিষা, বড়ই, ধান, পাট, গম, ভুট্টা ও অন্যান্য ফলমূল শাকসব্জির চাষ হয়। যা স্থানীয় বাজার ও সীমান্ত হাটের মাধ্যমে বিক্রি হয়।
রাজিবপুরের কৃষকদের আরও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, কোল্ডস্টোর/হিমাগার, বিনামূল্যে সেচ ব্যবস্থাপনাসহ, বাজার সংযোগ নিশ্চিত করা গেলে তাদের উৎপাদন লাভজনক হবে।

শিক্ষা: সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত;
রাজিবপুরের শিক্ষা ব্যবস্থা এখনও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। অনেক শিশু প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই ঝরে পড়ে। তবে, স্থানীয় যুবক-যুবতীরা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কম্পিউটার শিক্ষা চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন।
স্বাস্থ্য: চ্যালেঞ্জ ও সমাধান;
রাজিবপুরে একটি মাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের অভাব এবং চিকিৎসাসেবার সংকট বিশেষত নদীভাঙন ও সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের জন্য আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উন্নয়ন পরিকল্পনা: ব্রহ্মপূত্রের বিস্তৃত খোলা বলুখনিজ সম্পদ রক্ষায় সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প বা নৌবাহিনীর মনিটরিং সেল অথবা আন্তঃর্জাতিক মানের নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হলে তা স্থানীয় জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সাম্প্রতিক বেইজিং-এ চীন-বাংলাদেশের নদিচুক্তির পরবর্তি ধাপে সঠিক পরিকল্পনা সংযুক্তির মাধ্যমে সমৃদ্ধ সূচনা হতে পারে এ অঞ্চলে।

রাজিবপুরের সমস্যা- সম্ভবনা
রাজিবপুরের মানুষ, তাদের সংগ্রাম এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য—সবকিছু মিলে এই উপজেলাকে আরও উন্নত ও প্রগতিশীল করে তুলতে পারে। তাই সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বেসরকারি সংস্থা এবং স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগে রাজিবপুরের উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।