
মো: সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী:
বাজারে এক কয়েল (এক আরএম) বৈদ্যুতিক তারের দাম যেখানে ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে, সেখানে রাজশাহীর নওহাটা পৌরসভা সেই একই তার কিনেছে ১৬ হাজার ২০০ টাকায়—এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। শুধু তারই নয়, এলইডি বাল্ব, ফ্লাডলাইট, লাইট হোল্ডার ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেনাকাটায় অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য দেখিয়ে সরকারি তহবিল থেকে অতিরিক্ত বিল পরিশোধের অভিযোগ উঠেছে পৌরসভার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট মাসে মেসার্স রুমেল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব মালামাল ক্রয় দেখানো হয়। বিলের কপি ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৫০০টি ১৫ ওয়াটের এলইডি বাল্ব কেনা হয়েছে প্রতিটি ৩১৮ টাকা দরে, যা বাজারে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
একইভাবে ১০০টি লাইট হোল্ডার কেনা হয়েছে প্রতিটি ২১০ টাকা দরে, যেখানে স্থানীয় বাজারে এর মূল্য মাত্র ৭০ টাকা। সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টি করেছে বৈদ্যুতিক তার ক্রয়। নথিতে দেখা যায়, তিন কয়েল (১ আরএম) তার কেনা হয়েছে মোট ৪৮ হাজার ৬০০ টাকায়, অর্থাৎ প্রতি কয়েল ১৬ হাজার ২০০ টাকা—যা বাজারদরের গড়ে পাঁচগুণ। এছাড়া ১০০ ওয়াটের ১৩টি ফ্লাডলাইট কেনা হয়েছে প্রতিটি ৩ হাজার ৬৪০ টাকায়, অথচ বাজারে এর দাম ৩ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে।
স্থানীয়দের অভিযোগ—সরবরাহ করা হয়েছে ১০০ ওয়াট নয়, ৫০ ওয়াটের ফ্লাডলাইট, কিন্তু বিল দেখানো হয়েছে বড় ওয়াটের হিসেবে।
পৌর কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাগজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেখানো হলেও বাস্তবে মালামাল সংগ্রহ ও বিল প্রস্তুতের কাজ করেছেন পৌরসভার দুই কর্মকর্তা নিজেরাই। অভিযোগকারীরা আরও জানান, বেশি দাম দেখানো বিলের অতিরিক্ত অংশ ভাগাভাগি হয়েছে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলে।
স্থানীয় এক যুবদল নেতা অভিযোগ করে বলেন, এভাবে বছরের পর বছর পৌরসভায় কেনাকাটার নামে লুটপাট চলছে। এই ইলেকট্রিক পণ্য কেনাকাটা করেছেন দুই কর্মকর্তা। তাঁরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেখালেও বাস্তবে নিজেরাই মালামাল কিনে সরবরাহ করেছেন। এ কারণে দামও বেশি দেখিয়েছেন। সেই টাকার ভাগ ইউএনও বরাবর পৌছে গেছে সে কারণে তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন , তদন্ত করবো বলে নীরব থেকে যাচ্ছেন। তাই ইউএনও চুপ , তদন্ত করবেন বলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই করেন না।
সরেজমিনে উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রহিমকে অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি প্রথমেই ইউএনওর অনুমতি নিতে ফোন করেন। ফোনে যোগাযোগ না পেয়ে তিনি বলেন, “মালামাল সরবরাহ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নিয়ম মেনেই দরপত্র ও মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ইউএনও মহোদয়ের অনুমতি ছাড়া আমি কোনো অতিরিক্ত বক্তব্য দিতে পারব না। তাঁর নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিস্তারিত তথ্য দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার প্রশাসক ও পবা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ জানান, “কাজটি কোটেশনের মাধ্যমে দ্রুত ক্রয় প্রক্রিয়ায় হয়েছে। এখানে ইচ্ছেমতো বেশি মূল্য দেখানোর সুযোগ নেই। তারপরও অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”
তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন—যেখানে বাজারদরের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেশি দামে পণ্য কেনা হয়েছে, সেখানে শুধু ‘তদন্ত চলছে’ বলে থেমে গেলে কি সত্যিই দায়ীদের বিচার হবে? নাকি আগের মতোই তদন্তের নামে সবকিছু ধামাচাপা পড়ে যাবে—এই নিয়েই এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা নওহাটা পৌরসভা ও আশপাশের এলাকায়।