
সত্য প্রকাশ ন্যায়ের সাথে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা বৈশ্বিক শুল্কের বেশিরভাগকেই অবৈধ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালত। সাত-চার ভোটে দেওয়া এই রায়কে ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতির জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
আদালত রায়ে বলেছে, আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (আইইইপিএ) প্রেসিডেন্টকে শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দেয় না। এটি কংগ্রেসের এখতিয়ারভুক্ত বিষয়। তাই ট্রাম্পের আরোপিত বৈশ্বিক শুল্ক আইনবিরুদ্ধ ও অবৈধ। ১২৭ পৃষ্ঠার রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আইইইপিএ-তে কোথাও ‘ট্যারিফ’ বা ‘ডিউটি’র মতো শব্দ নেই, যা দিয়ে প্রেসিডেন্টকে এমন ক্ষমতা দেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
তবে আদালত ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত শুল্ক বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে, যাতে ট্রাম্প প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টে আপিলের সুযোগ পায়।
ট্রাম্প এই রায়ের তীব্র সমালোচনা করে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেছেন, “এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে তা যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করবে।” তিনি সতর্ক করে বলেন, “শুল্ক তুলে নেওয়া হলে দেশ ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে এবং আমেরিকা আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে।”
প্রসঙ্গত, ট্রাম্প আইইইপিএ-র আওতায় জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে বিশ্বব্যাপী ১০ শতাংশ শুল্ক এবং আরও কয়েকটি দেশের ওপর অতিরিক্ত ‘পারস্পরিক শুল্ক’ আরোপ করেছিলেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্যায্য বাণিজ্যনীতির হাত থেকে মুক্তির দিন’।
কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের উদ্যোগে দায়ের হওয়া মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই আদালত এই রায় দিয়েছে। এর ফলে শুধু বৈশ্বিক শুল্কই নয়, কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর আরোপিত শুল্কও বাতিল হয়ে গেছে। যদিও ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আরোপিত শুল্ক এ রায়ের আওতায় আসেনি, কারণ সেগুলো ভিন্ন আইনি ক্ষমতায় আরোপিত হয়েছিল।
রায়ের আগে হোয়াইট হাউসের আইনজীবীরা সতর্ক করেছিলেন, এসব শুল্ক বাতিল হলে ১৯২৯ সালের মহামন্দার মতো অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। তবে আদালত যুক্তি খারিজ করে জানায়, কর ও শুল্ক আরোপের ক্ষমতা মূলত কংগ্রেসের একচেটিয়া এখতিয়ার।
এখন মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে গড়ালে নয়জন বিচারপতি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, কারণ বর্তমান সুপ্রিম কোর্টে ছয়জন রিপাবলিকান নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারপতি রয়েছেন, যাদের মধ্যে তিনজন ট্রাম্পের মনোনীত।